শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১১:৪১ পূর্বাহ্ন

কুড়িগ্রামে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত, পয়ঃনিস্কাশন ও বিশুদ্ধ পানির সংকট

কুড়িগ্রামে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত, পয়ঃনিস্কাশন ও বিশুদ্ধ পানির সংকট

 

সাইফুর রহমান শামীম, কুড়িগ্রাম।

ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নতুন করে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেলেও,তিস্তা,দুধকুমার ও ধরলার পানি কিছুটা কমেছে। পানি কমলেও ধরলা বিপৎসীমার খুব কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে আর তিস্তা গত ৬ দিন থেকে বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে।

পানি বাড়ার কারণে চরাঞ্চলগুলোতে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি শৌচাগারগুলো পানিতে ডুবে থাকায় নারী ও কিশোরীরা সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় লোকজন নৌকায় করে যাতায়াত করছেন। গো-চারণভূমিগুলো তলিয়া যাওয়ায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। পানি বন্দি হয়ে পড়েছে এসব অঞ্চলের প্রায় ৫ হাজার পরিবার। সরকারিভাবে কেউ ত্রাণ পেলেও অধিকাংশই না পাওয়ার অভিযোগ করেন।

বৃহঃবার (৩১ আগষ্ট) কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)র দুপুর ১২ টার দেয়া তথ্যমতে,গত ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুন খাওয়া পয়েন্টে বেড়ে বিপৎসীমার ২০ সে.মি,চিলমারী পয়েন্টে বেড়ে বিপৎসীমার ৮ সে.মি,ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে কমে বিপৎসীমার ৩০ সে.মি,দুধকুমার পাটেশ্বরী পয়েন্টে কমে বিপৎসীমার ৫৭ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে কমে বিপৎসীমার ১ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সদর উপজেলার চর যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরের বাসিন্দা হাজরা বেওয়া বলেন,’আজ ৫ দিন হয় বানের পানিত পায়খানা ডুবি গেইছে। খাবার পানির কল তলে আছে বাহে ,কেমন করি চলা-ফেরা করি বোঝেন না। হামরা মহিলা মানুষ সোগ জাগাত তো যাবার না পাই,কেমন করি পায়খানা,প্রসাব করি বুঝি নেও।’

এই চরের আরেক বাসিন্দা ফরিদা বেগম বলেন,’বানের পানিত টিউবওয়েল ডুবে গেছে আজ ৪-৫ দিন হয়। এই জাগাত ৬০-৭০টা ঘর, সোগ(সব) ঘরের মানুষ পাশের বাড়ির থাকি পানি আনি। ওমার কলের পাড় কোনা উঁচ্যা(উঁচু) করা । খাবার পানির খুব কষ্ট হইছে।’

ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের খেয়ার আলগা চরের বাসিন্দা আলো খাতুন বলেন,’স্বামী বাড়িতে নাই,শহরে কাজে গেছে। বাচ্চা ৩ টা ছোট ,বাচ্চা ৩টাক ধরে নিজে নৌকা চালায় যাচ্ছি। কি করবো চলা-ফেরা তো করা নাগবে।’

এই চরের আরেক বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম বলেন,’হামার ঘরত পানি উঠছে, মানুষের বাড়িত আশ্রয় নিছি আজ দুইদিন হলো। নদির পানি আজ সকালেও এক হাত বাড়ছে। খাওয়ার পানির খুব কষ্ট হইছে। হাত-পাও সাদা হয়া গেছে।’

উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া বলেন,’আমার এলাকার কয়েকটা চরে ব্রহ্মপুত্রের পানিতে প্রায় ৭০০ পরিবার পানিবন্দী। সরকারের থেকে ৪ টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে ।’

সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান,’ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার প্রায় দুইশতটির মতো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শৌচাগারের সমস্যাটা বেশি দেখা দিয়েছে।’

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো)’র নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান,আগামী ২৪ ঘন্টায় তিস্তা,ধরলা ও দুধকুমারের পানি কিছুটা কমে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হবে এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে কিছু নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হতে পারে ।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বন্যার জন্য বরাদ্দকৃত ৩৬২ মে.টন চাল, ৫ লাখ নগদ টাকা ও ৩ হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার উপজেলা ভিত্তিক চাহিদামতো বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সেসব বিতরণের কাজ চলমান এবং শিশু খাদ্য বাবদ ২ লাখ ও গো খাদ্য ক্রয় বাবদ ৫ লাখ টাকা মজুত আছে। নতুন করে বরাদ্দের চাহিদা এখন পর্যন্ত প্রয়োজন নেই।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024 Rangpurtimes24.Com
Developed BY Rafi IT